Ravindranath Tagore : A Universal Teacher- Bengali Translation

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: একজন সর্বজনীন শিক্ষক

                                                                                            সিবি কে. জোসেফ

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই মে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য ওঁর জন্মদিন পালিত হয় বাংলা ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী, ২৫শে বৈশাখ। সে বছর ২৫শে বৈশাখ ছিল ৭ই মে। এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দে ২৫শে বৈশাখ পড়েছে ৯-ই মে। ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্য গ্রন্থের জন্য। সেটা ১৯১৩ সাল। ব্রিটিশ সরকারও সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাঁকে নাইট সম্মানে  ভূষিত করেছিলেন, কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের নারকীয় হত্যা লীলার প্রতিবাদে তিনি সেই সম্মান পরিত্যাগ করেন।


 





রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধী নিজেদের মধ্যে এক অসাধারণ সম্পর্ক রচনা করেছিলেন। গান্ধীজি ১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি ও তাঁর ফিনিক্স দলের সদস্যদের শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ জানান। শান্তনিকেতনের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যে তিনি গান্ধীজিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতে এটা ছিল পূর্ণ স্বরাজের দিকে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এবং গান্ধীজির মতাদর্শে, কবিগুরুর স্বীকৃতিরও প্রকাশ। এই সম্পর্ক তাঁদের জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত বহাল ছিল যদিও কিছু কিছু ব্যাপারে মতদ্বৈধতা তাঁরা প্রকাশ্যে আলোচনা করেছেন।









১৯০৯ সালে গোখালেকে লেখা, ড: প্রাণজীবন মেহেতার চিঠিতে প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় গান্ধীজিকে মহাত্মাখেতাব দেবার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও রবীন্দ্রনাথই তার আগে গান্ধীজিকে মহাত্মা বলেছিলেন এবং মহাত্মা কবিকে গুরুদেব বলে সম্বোধন করেছিলেন।IIT-তিরুপতির-রHumanities এবং Social Scienceবিভাগের অধ্যাপক A. Raghuramarajuএকটি webinar-এ বলেছেন, গান্ধী সম্ভবত রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব বলে সম্বোধন করে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি ভাবে তাঁর বর্তমান সত্ত্বাকে আরও মুক্ত করতে পারা যায়। এ কাজ যথেষ্ঠ কঠিন হলেও কবি সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে গান্ধীজিকে সেই দিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সুক্ষ্ম ভাবে, গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথের মতপার্থক্যগুলিদার্শনিক এবং ভাবাদর্শের দিক থেকে ব্যাখ্যা ক’রেRaghuramaraju সেই অসাধারণ ছাত্র-শিক্ষকের শ্রদ্ধা এবং সম্মান মেশানো সম্পর্ককে বর্ণনা করেছেন। প্রতিটি প্রকাশ্য বিতর্ক যেন কবিগুরুর দেওয়া এক একটি সমস্যা। গুরু প্রদত্ত এই সব কঠিন সমস্যা সমাধানের  ভেতর দিয়ে প্রিয় ছাত্রের উন্নতি হতে থাকে। এবং ক্রমে ছাত্রটি তার গুরুকেও অতিক্রম করে যান। ভাল শিক্ষকগণ কখনো কঠিন সমস্যা তাঁদের ছাত্রদের অসফল হওয়ার জন্য দেননা। ক্রমান্বয়ে সুক্ষ্ম আদর্শগত বিষয়ে তর্ক তথা আলোচনার ভিতর দিয়ে গুরু শিষ্যের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।


 









রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,

চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য, উচ্চ যেথা শির,

জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর

আপন প্রাঙ্গনতলে দিবস শর্বরী,

বসুধাকে রাখেনাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি

যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে

উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে..

 রবি ঠাকুরের মত কোনো একজন ব্যক্তিই এই কথা বলতে পারতেন।

 কথাগুলির একটা চিরস্থায়ী প্রাসঙ্গিকতা আছে। রবিঠাকুর এবং গান্ধীজি, দুজনেই সত্যসন্ধানে আগ্রহশীল ছিলেন। উভয়েরই সার্বিক একটা দৃষ্টি ভঙ্গী ছিল যদিও সত্যকে তাঁরা ভিন্ন ভাবে বুঝেছিলেন। এরই ফলশ্রুতি ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রিয় ব্যাপারে গভীর বিতর্ক। এই সব বিতর্ক আমাদের চিরন্তন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সম্বৃদ্ধ করতো। আজ ভারতবর্ষে এই ধরণের বিতর্ক ও কথোপকথন অবিদ্যমান। যখন গান্ধীজি অগণিত বস্ত্রহীন দরিদ্র দেশবাশীর  বিদেশী পরিধান বর্জন  এবং দাহ করার আহ্বান জানালেন, গান্ধীজি রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, এই বর্জন ও দহনের মধ্যদিয়ে আমি আমার অপমান কে দাহ করছি। আপামর বস্ত্রহীন দরিদ্র দেশবাসীকে অর্থোপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়ারপরিবর্তে বস্ত্র দিয়ে যে অপমান করছি, তার প্রতিবাদ করছি। 






 রবীন্দ্রনাথ এবং আইনস্টাইনের বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং ১৯১৯ সালে এঁরা যুদ্ধবিরোধী ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছিলেন। এই সময়ে তিনি ৯.৭.১৯১৯ সালে রোমা রেঁলাকে খোলা চিঠিতে লিখেছিলেনআমার চিত্ত যখন নৈরাশ্যে পুর্ণ হয়েছিল, এই ভেবে যে বিগত  বৈরীতা, যুদ্ধ, পারস্পরিক ঘৃণা এবং ধ্বংস থেকে মানুষ কোনো শিক্ষাই পায়নি, আপনার পত্রে যেন আশ্বাসবাণী পেলাম। সত্য সর্বদাই অল্পসংখক কে প্রভাবিত করে আর বাকীরা তাকে পরিত্যাগ করে। বহু মানুষের দ্বারা পরিত্বক্ত হলেও সত্যই শেষ পর্য্যন্ত জয়লাভ করে। স্বল্প সংক্ষক হলেও ইউরোপের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বিবেক যে নিজেদের দৃঢ় ভাবে যুদ্ধের বিরোধিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে তা আশাব্যঞ্জক। আমি আনন্দের সঙ্গে আপনার আমণ্ত্রণে  এই স্বাধীনচেতাদেরশ্রেনীতে যোগ দিতেএবং তাদের ঘোষণাপত্রে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। আইনস্টাইন রবীন্দ্রনাথের ৭০তম জন্মদিনে প্রকাশিত The Golden Book of Tagore (1931)-এরবীন্দ্রনাথের ওপরেএকটিরচনা লেখেন। বলা হয়ে থাকে যে ১৯৩১ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সাম্মানিক ডক্টরেট দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু  আইনস্টাইনের প্রতি নাজিদের দুর্ব্যবহারের জন্য তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। আইনস্টাইন কবিকে রাব্বি বলে সম্বোধন করতেন, যা হিব্রূতে একজন সার্বজনীনশিক্ষক বোঝায়।

 




রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১-এর ৭ই আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, যিনি তখন জেলে বন্দী ছিলেন, তাঁর ডাইরীতে লেখেন,  গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ পৃথক দুই ব্যক্তিত্ব। কিন্তু দুজনেই ভারতীয় পরম্পরারপ্রতিরূপ, ভারতের  মহান ব্যক্তিত্ব এবং বর্তমানে বিশ্বের দুই বিশিষ্ট উদাহরণ। পৃথিবীতে অন্য অনেকে আছেন, যাঁরা নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুণের অধিকারী। কিন্তু সামগ্রিক দিক দেখলে, এই দুজন সত্যই বিশিষ্ট। আমি সৌভাগ্যবান যে এঁদের দুজনেরই সংস্পর্শে আসতে পেরেছি

 About the Author

Dr. Siby K. Joseph is Director, Sri Jamnalal Bajaj Memorial Library and Research Centre for Gandhian Studies, Sevagram Ashram Pratishthan, Sevagram,Wardha- 442102,  Maharashtra  and Author of the book Ashrams of Gandhi and Lanza del Vasto  Email: directorjbmlrc@gmail.com

Acknowledgement

The original text was written in English . The author would like to acknowledge his indebtedness to Shri Alok Bhattacharya, Kolkata  for Bengali translation


Comments

Popular posts from this blog

Positive Power Dynamics

Allowance for the upkeep of Gandhi as a State Prisoner in 1930

Workshop sessions on Gandhi and Community Living